অনলাইনে জমি খারিজ পদ্ধতি | জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ?

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?

অনলাইনে জমি খারিজ করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র লাগে। এই কাগজপত্রগুলো না থাকলে অনলাইনে জমি খারিজের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না। জমি খারিজের প্রক্রিয়া শুরু করার আগে সঠিক কাগজপত্র সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে জমি খারিজের সুবিধা হলো, বাসায় বসেই কাজ সম্পন্ন করা যায়। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঠিক তালিকা জানা খুব জরুরি। অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্ত হন বা ধীরগতি বোধ করেন। তাই সঠিক তথ্য এবং কাগজপত্রের তালিকা জানা থাকলে কাজটি সহজ হয়ে যায়। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা অনলাইনে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে তা নিয়ে আলোচনা করব। এতে আপনার জমি খারিজ প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হবে।

জমি খারিজ কি?

অনলাইনে জমি খারিজ করতে চান? কিন্তু জানেন না কি কি কাগজ লাগে? প্রথমেই জানতে হবে জমি খারিজ কি? এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির মালিকানা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে স্থানান্তরিত হয়। এটি জমির দখল ও মালিকানার বৈধতা নিশ্চিত করে।

সংজ্ঞাঃ

জমি খারিজ বলতে জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বোঝায়। এটি আইনগতভাবে জমির মালিকানা স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া। জমি খারিজের মাধ্যমে পুরোনো মালিকের নাম খারিজ করে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রয়োজনীয়তাঃ

জমি খারিজের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।

১. প্রথমত, জমির দলিল বা ডিড।

২.দ্বিতীয়ত, জমির পর্চা বা খতিয়ান।

৩.তৃতীয়ত, জমির মিউটেশন সার্টিফিকেট। এছাড়াও জমির কর পরিশোধের রসিদ ও মালিকের পরিচয়পত্র প্রয়োজন।

অনলাইনে জমি খারিজ’র প্রক্রিয়াঃ লাগবে যে সকল কাগজপত্র 

অনলাইনে জমি খারিজের প্রক্রিয়া বর্তমানে খুবই সহজ। নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে, আপনার ঘরে বসেই জমি খারিজ করা সম্ভব। শুধু কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এখানে আমরা সেই ধাপগুলো আলোচনা করবো।

বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের ফলে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ অনলাইনে সহজেই সম্পন্ন করা যায়। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জমি খারিজ বা মিউটেশন (Mutation)। আগে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে মানুষের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হতো, কিন্তু এখন এটি অনলাইনের মাধ্যমে করা সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা অনলাইনে জমি খারিজ’র প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

৪ টি জমি খারিজের ধাপ রয়েছে, ধাপগুলো হলঃ

১. প্রথমে, নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগইন করুন। সেখানে আপনার জমির তথ্য দিন।

২. এরপরে, জমির মালিকানা প্রমাণপত্র আপলোড করুন।

৩. জমির ম্যাপ এবং খারিজ ফি পরিশোধ করুন।

৪.  সবশেষে, জমির খারিজ ফরম পূরণ করে সাবমিট করুন।

সময়সীমাঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে সাধারণত ১৫-২০ দিন লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও কম সময় নিতে পারে। জমির তথ্য এবং কাগজপত্র সঠিক থাকলে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে গেলে কয়েকটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সঠিক কাগজপত্র না দিলে আপনার আবেদন গ্রহণ হবে না। এই পোস্টে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলোচনা করব।

মৌজা ম্যাপঃ

মৌজা ম্যাপ জমির সঠিক অবস্থান নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জমির সীমানা, স্থান এবং আশেপাশের জমির তথ্য দেয়। জমি খারিজের জন্য মৌজা ম্যাপ জমা দিতে হবে।

খতিয়ানঃ

খতিয়ান জমির মালিকানা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এটি জমির পূর্ববর্তী মালিকদের তথ্য দেয়। খতিয়ান জমা না দিলে জমি খারিজ করা সম্ভব নয়।

দলিলঃ

দলিল জমির আইনি প্রমাণপত্র। এটি জমির মালিকানার বৈধতা নিশ্চিত করে। জমি খারিজের জন্য দলিল জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?

অনলাইনে জমি খারিজের আবেদন করার সহজ উপায়ঃ 

জমি খারিজ করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে জমির দলিল, খারিজের ফি জমা দেওয়ার রসিদ, এবং জমির মালিকের আইডি কার্ড প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র প্রশাসনিক ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকে। আবেদনকারীর স্বাক্ষরিত ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।

সাইট তথ্যঃ এইখানে ওয়েবসাইট ভিসিট করুন।
নাগরিক সেবা কেন্দ্রঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে নাগরিক সেবা কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে আপনি জমি খারিজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সেবা পাবেন। নাগরিক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইনে জমি খারিজের প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়।

অবস্থানঃ

নাগরিক সেবা কেন্দ্র সাধারণত শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। বিভিন্ন উপজেলায়ও এ কেন্দ্রগুলো পাওয়া যায়। আপনি নিকটস্থ সেবা কেন্দ্রের ঠিকানা অনলাইনে খুঁজে নিতে পারেন।

সেবাঃ 

নাগরিক সেবা কেন্দ্রে জমি খারিজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এখানে জমি খারিজের ফরম পূরণ করতে সাহায্য করা হয়। এছাড়াও, জমির মালিকানা প্রমাণপত্র, নামজারী খতিয়ান, এবং জমি করের রসিদ জমা দিতে হয়।

নাগরিক সেবা কেন্দ্রে জমি খারিজের সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। এসব সেবা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে পাওয়া যায়।

আরও জানুন,

জমির নামজারিতে কত টাকা লাগে ও কতদিন সময় লাগে জানুন

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?

 

ডিজিটাল স্বাক্ষরঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে ডিজিটাল স্বাক্ষর অপরিহার্য। এটি একটি নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি। কাগজপত্রের ঝামেলা কমাতে এর জুড়ি নেই। ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে আপনি সহজে এবং দ্রুত জমি খারিজ করতে পারবেন।

কিভাবে পাবেন?

ডিজিটাল স্বাক্ষর পেতে প্রথমে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরণের পর, কিছু প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ইমেইলে ডিজিটাল স্বাক্ষর পাঠানো হবে।

ব্যবহারঃ

ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনার কম্পিউটারে সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টলেশন সম্পন্ন হলে, জমি খারিজের অনলাইন ফর্মে আপনার স্বাক্ষর যোগ করতে পারবেন। স্বাক্ষর যোগ করার পর, ফর্ম জমা দিন।

ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের ফলে প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও অনুমোদিত পদ্ধতি।

আরও জানুন,

জমি ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : জেনে নিন শর্তবলী

 

অনলাইনে জমি খারিজ এর ফি এবং চার্জঃ

জমি খারিজ প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফি এবং চার্জ. এই প্রক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এছাড়া কিছু ফি এবং অন্যান্য চার্জ দিতে হয়। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আবেদন ফিঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে হলে আবেদন ফি জমা দিতে হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত এই ফি নিম্নরূপ:

  • শহর অঞ্চলে: ৫০০-১০০০ টাকা
  • গ্রাম অঞ্চলে: ২০০-৫০০ টাকা
অন্যান্য চার্জঃ

জমি খারিজ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের অন্যান্য চার্জ থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চার্জ নিম্নরূপ:

চার্জপরিমাণ
নথি যাচাই ফি৩০০ টাকা
অনলাইনে জমা দেওয়ার ফি২০০ টাকা
অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং ফি৪০০ টাকা

 

উপরের চার্জগুলি বাদে, কিছু অতিরিক্ত খরচও থাকতে পারে। যেমন, নোটারি ফি, দালাল ফি ইত্যাদি।

অনলাইনে জমি খারিজ
কত সময় লাগে?

অনলাইনে জমি খারিজের প্রক্রিয়া সাধারণত ১৫-৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।

অভিযোগ এবং সহায়তাঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে গিয়ে অনেক সময় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধান ও সহায়তা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। নিচে অভিযোগ জানানোর উপায় এবং সহায়তা কেন্দ্র সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হলো।

অভিযোগ জানানোর উপায়ঃ

অনলাইনে জমি খারিজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে অভিযোগ জানানো যায়। প্রথমে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। তারপর “অভিযোগ” বা “কমপ্লেইন” বিভাগে ক্লিক করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে সমস্যার বিবরণ দিতে হবে। ফর্মটি জমা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা পর্যালোচনা করবে এবং সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেবে।

সহায়তা কেন্দ্রঃ

সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটে সহায়তা কেন্দ্রের ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাওয়া যায়। এছাড়াও, অনলাইনে লাইভ চ্যাট সুবিধা থাকলে সেখানে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। ইমেইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাহায্য চাওয়া যায়। সহায়তা কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা দ্রুত সমাধান দিতে চেষ্টা করবেন।

অনলাইনে জমি খারিজের সুবিধা

অনলাইনে জমি খারিজ করার ফলে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা হয়েছে, যেমন:

  • সময় ও খরচ কমে যায়।

  • দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর ঝামেলা এড়ানো যায়।

  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

  • আবেদন ও আপডেট তথ্য সহজেই অনলাইনে ট্র্যাক করা যায়।

(FAQs) প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:

জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ২০২৪?

জমি খারিজ করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: ১. জমির পর্চা ২. খাজনার রশিদ ৩. দাখিলা ৪. হালনাগাদ নামজারি কাগজ ৫. জমির দলিল ৬. উত্তরাধিকার সনদ ৭. জমি মাপের নকশা।

খারিজ করতে কি কি কাগজ পাতি লাগে?

খারিজ করতে জমির দলিল, খারিজের আবেদনপত্র, কর পরিশোধের রশিদ, জমির নকশা এবং আইডি প্রুফ লাগে।

নামজারি করতে কী কী কাগজ লাগে?

নামজারি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: জমির দলিল, নামজারি আবেদন ফরম, খাজনা রসিদ, নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় ফি।

জমি ক্রয় করতে কি কি কাগজ লাগে?

জমি ক্রয় করতে দলিল, পর্চা, খাজনা রশিদ, মিউটেশন সার্টিফিকেট, দাতা ও ক্রেতার পরিচয়পত্র, ছবি ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি লাগে।

উপসংহারঃ

জমি খারিজ প্রক্রিয়া অনলাইনে সহজ হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখুন। জাতীয় পরিচয়পত্র, দলিল, নামজারি সনদ ইত্যাদি আবশ্যক। জমির মালিকানার প্রমাণপত্র সঠিকভাবে জমা দিন। অনলাইন পোর্টালে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন। প্রয়োজনীয় ফি জমা দিন। সব কাগজপত্র সঠিক থাকলে খারিজ প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন হবে। অনলাইনে খারিজ করতে সময় এবং খরচ কম। সুতরাং, অনলাইনে জমি খারিজ প্রক্রিয়া সবার জন্য সহজ এবং সুবিধাজনক।

 

2 thoughts on “অনলাইনে জমি খারিজ পদ্ধতি | জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ?”

Leave a Comment